২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া : পর্বসংখ্যা-৩ (বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়)

অধ্যায় এক : ঔপনিবেশিক যুগ ও বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রাম
-

সুপ্রিয় অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী বন্ধুরা, শুভেচ্ছা নিয়ো। আজ তোমাদের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ‘অধ্যায় এক : ঔপনিবেশিক যুগ ও বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রাম’ থেকে একটি নমুনা সৃজনশীল প্রশ্ন ও তার উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হলো।
উদ্দীপকটি পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের এক সেমিনারে বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে বক্তাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। ওই সেমিনারের এক বক্তা ড. মাহবুবুল হক বিশ্বের বৃহত্তম ও এশিয়ার প্রধান অর্থনীতির দেশ হিসেবে চীনের আবির্ভাবে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তখন অন্য বক্তা ড. ফজলে বারী বলেন, গোটা বিশ্বের স্বনামধন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো চীনে তাদের শিল্পকারখানা স্থাপন করেছে। তাই তাদের উত্তরোত্তর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তখন পাশ থেকে এক শ্রোতা প্রশ্ন করল, এক সময় তো আমাদের দেশেও বহির্বিশ্বের অনেকেই শিল্পকারখানা স্থাপন করেছে। অথচ আমাদের উন্নত হয়নি কেন? জবাবে ড. মাহবুবুল হক বললেন, তারা আমাদের শোষণ করতে শিল্প স্থাপন করেছিল, আমাদের উন্নতির জন্য শিল্প স্থাপন করেনি।
ক. কাদের হাতে সেনদের শাসনের অবসান ঘটে?
খ. কাদের মাধ্যমে এবং কখন পুঁজি ও সম্পদ বাংলা থেকে ইংল্যান্ডে পাচার হয়ে যায়?
গ.উদ্দীপকে শ্রোতা বলতে কাদের বোঝাতে চেয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. চীন উন্নত হতে পেরেছে অথচ বাংলা অঞ্চল উন্নত হতে না পারার অন্তরায়সমূহ বিশ্লেষণ করো।
উত্তর : ক. বহিরাগত মুসলমান শক্তির হাতে সেনদের শাসনের অবসান ঘটে।
খ. ইউরোপীয় বণিকেরা বাংলায় স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করার পর কলকাতা, চন্দননগর, চুচুঁড়া, কাশিমবাজার প্রভৃতি স্থানে ইউরোপীয় বাণিজ্যকেন্দ্রগুলো ফুলে ফেঁপে উঠতে থাকে। তাদের মাধ্যমেই বাংলা থেকে ইংল্যান্ডে পুঁজি ও সম্পদ পাচার হতে থাকে। পলাশী যুদ্ধের আগে এবং মীর জাফর ও মীর কাশিমের আমলে বাংলার প্রচুর সম্পদ ইংল্যান্ডে পাচার হয়ে যায়।
গ. উদ্দীপকে শ্রোতার বক্তব্য একসময় আমাদের দেশেও বহির্বিশ্বের অনেকেই শিল্পকারখানা স্থাপন করেছে। অথচ আমাদের দেশ উন্নত হয়নি। এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এ দেশে ইউরোপীয়দের শিল্প কারখানা স্থাপন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কথা ফুটে উঠেছে। ১৬৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ইউরোপে যুদ্ধরত বিভিন্ন দেশের মধ্যে ওয়েস্টফালিয়ার শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলে বিভিন্ন ইউরোপীয় জাতি ভারতবর্ষে বাণিজ্য করতে আসে। তখন বাংলা অঞ্চলে পর্তুগিজ, ফরাসি, ওলন্দাজ ও দিনেমাররা কারখানা স্থাপন করে। ফরাসি পর্যটক বার্নিয়ের ১৬৬৬ সালে লিখেছেন, ‘ওলন্দাজরা তাদের কাশিমবাজারের সিল্ক ফ্যাক্টরিতে কখনো কখনো ৭ থেকে ৮ শ’ লোক নিয়োগ করত। বার্নিয়ের আরো লিখেছেন, ‘শুধুমাত্র কাশিমবাজারে বছরে ২২ হাজার বেল সিল্ক উৎপাদিত হয়। কিন্তু তাদের কারখানা স্থাপনের মূল উদ্দেশ্য ছিল এ দেশ থেকে পুঁজি পাচার। এ দেশীয়দের উন্নতি নয়। তাই বাংলা থেকে যখন পুঁজি পাচার শুরু হয় তখন থেকে প্রজাদের ওপর শোষণ-নিপীড়ন অনেক বেড়েছে।
ঘ. ড. ফজলে বারীর বক্তব্যের মাধ্যমে জানা যায়, পৃথিবীর স্বনামধন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো চীনে তাদের শিল্পকারখানা স্থাপন করায় চীন বর্তমান বিশ্বের বৃহত্তম ও এশিয়ার প্রধান অর্থনীতির দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
চীনে ব্যাপক হারে বৈদেশিক বিনিয়োগ ও শিল্পকারখানা স্থাপিত হওয়ায় চীন উন্নত হতে পেরেছে। ব্রিটিশ আমলে আমাদের এই বাংলা অঞ্চলেও অনেক শিল্পকারখানা স্থাপিত হয়েছিল। কিন্তু আমাদের এই বাংলা অঞ্চল উন্নত হতে পারেনি। কারণ, ওই সব ইউরোপীয় জাতি প্রচুর মুনাফা অর্জন ও পুঁজি পাচারের উদ্দেশ্যে বাংলা অঞ্চলে বড় বড় শিল্পকারখানা স্থাপন করেছিল।
ফরাসি পর্যটক বার্নিয়ের লিখেছেন, ‘শুধু কাশিমবাজারে বছরে ২২ হাজার বেল সিল্ক উৎপাদিত হতো।’ ইউরোপীয়দের এসব শিল্পকারখানা ও বাণিজ্যকেন্দ্রগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণ পুঁজি ইউরোপে পাচার হতে থাকে। পলাশী যুদ্ধের আগে এবং মীর জাফর ও মীর কাশিমের আমলে বাংলার প্রচুর সম্পদ ইংল্যান্ডে পাচার হয়ে যায়। এ সম্পদের প্রাচুর্যের কথা স্বয়ং লর্ড ক্লাইভ ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টে সবিস্ময়ে উল্লেখ করেছিলেন। চীন উন্নত হতে পেরেছে, কিন্তু আমাদের এই বাংলা অঞ্চল বৈদেশিক বাণিজ্যিক গোষ্ঠীগুলোর মুনাফা অর্জন ও পুঁজি পাচারের কারণে শিল্পকারখানা স্থাপিত হলেও উন্নত হতে পারেনি।


আরো সংবাদ



premium cement